ডলারের বিনিময় হার আবারও বাড়ছে

ডলারের বিনিময় হার আবারও বাড়ছে

বিশ্ববাজারে ডলারের বিনিময় হার আবার কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে। আজ সোমবার সকালে বিশ্বের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মুদ্রার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার বেড়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

আজ সকালের শুরুতে এশিয়ার বাজারে ডলারের বিপরীতে পাউন্ড স্টার্লিংয়ের দর কমেছে শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ। ফলে এখন এক পাউন্ডের বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ১ দশমিক ২০২৮ ডলার। অস্ট্রেলীয় ডলারের দর কমেছে শূন্য দশমিক ১৮ শতাংশ। ফলে এক অস্ট্রেলীয় ডলারের বিপরীতে এখন শূন্য দশমিক ৬৮৬৬ ডলার পাওয়া যাচ্ছে। জাপানি ইয়েনের বিপরীতেও ডলার শক্তিশালী হয়েছে—শূন্য দশমিক ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে এক ডলারের বিপরীতে এখন ১৩৪ দশমিক ৩২ ডলার পাওয়া যাচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে ইউএস ডলার ইনডেক্স শূন্য দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ বেড়েছে। তার মান এখন ১০৪ দশমিক শূন্য ৩। এই মাসে যা ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসের পর এই দর এতটা বাড়েনি।

আজ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টস ডে, সেখানকার বাজার বন্ধ। সে জন্য আজ তেমন একটা লেনদেন হবে না বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির হার কমতে শুরু করেছে। জানুয়ারি মাসে তা ৬ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এসেছে। তা সত্ত্বেও এখনো তা অনেক বেশি বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। একই সঙ্গে জানুয়ারি মাসে দেশটির বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৪–এ নেমে এসেছে। গত মাসে ঘণ্টাপ্রতি গড় মজুরিও বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। সব মিলিয়ে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তা ৪ দশমিক ৪ শতাংশ বাড়তি। সেই সঙ্গে দেশটি জ্বালানি মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় নানা ধরনের প্রণোদনা দিয়েছে।

সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার এখনো বেশ চাঙা। এই বাস্তবতায় দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার আরও বৃদ্ধি করবে বলেই ধারণা। তবে বৃদ্ধির হার কমে আসবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন ডলারের তেজ আবারও কিছুটা বেড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনার এলপিএল ফিন্যান্সিয়ালের প্রধান অর্থনীতিবিদ জেফরি রোচ রয়টার্সকে বলেন, মূল্যস্ফীতির ধার কমে আসছে, কিন্তু তা কমানোর পথ এখনো অতটা মসৃণ নয়। ফেড হয়তো একটি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে না। ফেড যেভাবে ভেবেছে, মূল্যস্ফীতির হার হয়তো সেভাবে কমবে না। সে জন্য নীতি সুদহার বাড়বে।

এই পরিস্থিতিতে বাজার বিশ্লেষকেরা ভাবছেন, আগামী জুলাই মাস নাগাদ নীতি সুদহার ৫ দশমিক ৩ শতাংশে উঠতে পারে।

ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকও বলেছে, ইউরো অঞ্চলের নীতি সুদহার আরও কিছুটা বাড়াতে হবে। তবে এ ঘোষণায় ইউরোর দরে প্রভাব পড়েনি। এখনো এক ডলারের বিনিময়ে ১ দশমিক ০৬৭৭ ইউরো মিলছে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ডলারের শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউরোর দর সেভাবে বাড়বে না।

এদিকে আজ চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে। চীন শূন্য কোভিড নীতি থেকে বেরিয়ে এসেছে। ফলে তারা এখন অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত করতে নীতি সুদহার বাড়াবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। ফলে ডলার আরও শক্তিশালী হবে।

ডলারের বিনিময় হার বাড়লে উন্নয়নশীল দেশগুলো বিপাকে পড়ে। এতে তাদের আমদানি বেড়ে যায়। বাড়ে মূল্যস্ফীতির হার। কমে রিজার্ভ। গত এক বছরে যা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে।

কেন ডলারের দর বৃদ্ধি
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা সারা বিশ্বকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। সেই আশঙ্কায় গত বছর মার্কিন ডলারের দর বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। গত বছর বিশ্বজুড়ে আর্থিক খাতে নিয়ন্ত্রণমূলক নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যার কারণে মন্দার আশঙ্কা আরও ঘনীভূত হয়েছে।

মার্কিন ডলার যে উত্তাপ ছড়াচ্ছে, তা ঘরে-বাইরে সবাই টের পাচ্ছেন। মার্কিন ডলারের শক্তি এতই যে তার যেকোনো নড়াচড়া বিশ্বের নানা প্রান্তের সব স্তরের মানুষকেই স্পর্শ করে। বিশ্বের বাজারব্যবস্থা যখন অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে, অনিশ্চয়তায় ভোগে, বিনিয়োগকারীরা তখন নিরাপদ আশ্রয় খোঁজেন। গত বছর সেই বিনিয়োগ মাধ্যম ছিল ডলার। ফেডের নীতি সুদহার বৃদ্ধি তার পালে হাওয়া দিয়েছে। এতে বন্ডের সুদহার বৃদ্ধি পাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা সেদিকে ঝুঁকেছেন। ডলারের চাহিদা বৃদ্ধি পায়, বৃদ্ধি পায় তার দর।

Leave a Reply