বশেমুরবিপ্রবিতে শিক্ষক সংকটে একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত

বশেমুরবিপ্রবিতে শিক্ষক সংকটে একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত

 শিক্ষক সংকটে ব্যাহত হচ্ছে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষা কার্যক্রম। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় প্রতিটি বিভাগে অপর্যাপ্ত শিক্ষক থাকায় একাডেমিক কার্যক্রম ধীরগতিতে চলছে। সময়মতো পরীক্ষা না হওয়ায় সেশনজট বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষক শিক্ষাছুটিতে থাকায় অনেক বিভাগই একাডেমিক কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খাচ্ছে এবং একই শিক্ষক একাধিক কোর্সে ক্লাস নেয়ার ফলে শিক্ষার গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের বিভাগে বর্তমানে ১১ শিক্ষকের মধ্যে আটজনই আছেন শিক্ষাছুটিতে। তিন শিক্ষক সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করছেন পাঁচটি ব্যাচের একাডেমিক কার্যক্রম ঠিক রাখতে, কিন্তু তিনজনের পক্ষে দশজনের কাজ করা সম্ভব নয়। এছাড়া অমাদের বিভাগটি ল্যাবনির্ভর হওয়ায় বিষয়টি আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে আমাদের শিক্ষাবর্ষের অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা যখন স্নাতক সম্পন্ন করে, আমরা তখন চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের ভাইবাই শেষ করতে পারিনি।’

শুধু রসায়ন বিভাগেই নয়, একই অবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংসহ আরও বেশ কয়েকটি বিভাগের। এসব বিভাগের মধ্যে মার্কেটিং বিভাগে ছয় শিক্ষকের মধ্যে চারজন এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পাঁচ শিক্ষকের মধ্যে তিন জন শিক্ষাছুটিতে আছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২৯৪ শিক্ষক থাকলেও তাদের মধ্যে অন্তত ৯৬ শিক্ষকই আছেন শিক্ষাছুটিতে। এর আগে শিক্ষাছুটির বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ থাকরেও সম্প্রতি এ ধরনের নিয়োগ বন্ধ করে দেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে চরমে পৌঁছেছে শিক্ষক সংকট।

এই বিষয়ে মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান তাপস বালা বলেন, “যদি স্কলারশিপগুলো ইউজিসি বা বিশ্ববিদ্যালয়ে দিত, তাহলে শিক্ষকদের বলা যেত, ‘আপনি এখন ছুটি না নিয়ে পরে ছুটি নিন।’ কিন্তু যখন পদোন্নতিসহ সর্বত্র উচ্চতর ডিগ্রির শর্ত থাকে এবং একজন শিক্ষক নিজের মেধা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে স্কলারশিপ অর্জন করে, তখন শিক্ষাছুটি অনুমোদন না দেয়াটা তার সঙ্গে অন্যায় করা হবে।”

এই শিক্ষক আরও বলেন, ‘আমাদের বিভাগে চলতি শিক্ষাবর্ষে সপ্তম ব্যাচ আসতে যাচ্ছে। অরগানোগ্রাম অনুযায়ী আমাদের এখন অন্তত ১৭ শিক্ষক থাকার কথা, কিন্তু সেখানে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ছয়জন। শিক্ষাছুটির বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগ পরবর্তী বিষয়, ইউজিসি প্রথমে অরগানোগ্রাম অনুযায়ী বাকি ১১ শিক্ষক নিয়োগ দিক।’

এ বিষয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘ইউজিসির সঙ্গে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে, ইউজিসি শিক্ষাছুটিতে থাকা ২০ শতাংশ শিক্ষকের বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগে সম্মত হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত বিষয়গুলোর সমাধান হবে।’

পর্যাপ্তসংখ্যক শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কিউ এম মাহবুব বলেন, ‘ইউজিসির এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি কেন এত অনীহা জানা নেই। আমি শিক্ষক পদের জন্য তাদের সঙ্গে অনেক বাকবিতণ্ডা করেছি। আমি তাদের জানিয়ে দিয়েছি, তারা যদি শিক্ষক পদ না দেয়, তাহলে আগামীতে আমরাই সার্কুলার প্রদান করে দেব।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয় যখন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করেই শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু করে, তখন সেখানে শিক্ষক সংকট হবে, এটাই স্বাভাবিক। আমরা নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছি। একজন শিক্ষকের শিক্ষাছুটি অনুমোদনের আগেই চিন্তা করতে হবে, তার শিক্ষাছুটির ফলে বিভাগ সমস্যার মুখোমুখি হবে কি না। সাধারণত সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ শিক্ষককে শিক্ষাছুটিতে রাখা য়ায়। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যদি ৪০-৫০ শতাংশ শিক্ষককে শিক্ষাছুটি দিয়ে তাদের বিপরীতে নতুন শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানায়, সেটি তো সম্ভব নয়। যেসব শিক্ষকরা শিক্ষাছুটিতে থাকেন, তারা পূর্ণ বেতনেই ছুটিতে থাকেন, তাদের বিপরীতে নতুন কাউকে নিয়োগ দেয়া হলে একটি পদের জন্য দুজনের বেতন বহন করতে হবে। এসব কারণে চাইলেই শিক্ষাছুটির বিপরীতে নতুন শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ নেই।’
প্রসঙ্গত, ইউজিসির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী বশেমুরবিপ্রবিতে বর্তমানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গড় অনুপাত ১:৩৮ হলেও প্রায় ৯৬ শিক্ষক শিক্ষাছুটিতে থাকায় প্রকৃতপক্ষে এই অনুপাত দাঁড়িয়েছে ১:৫৫। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কোনো বিভাগে শিক্ষক সংকট তীব্র হওয়ায় এই অনুপাত প্রায় ১:১০০।

Leave a Reply