বায়ুদূষণ রোধে পদক্ষেপ জানানোর নির্দেশ হাইকোর্টের

বায়ুদূষণ রোধে পদক্ষেপ জানানোর নির্দেশ হাইকোর্টের

উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে ঢাকার বায়ুদূষণে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলেছেন আদালত।

এক আবেদনের শুনানি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মৌখিকভাবে এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে কথা বলেন আইনজীবী আমাতুল করিম এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষে আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা উপস্থিত ছিলেন।

শুনানিকালে পরিবেশ অধিদপ্তরের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘আপনারা কি আমাদের মেরে ফেলবেন না কি? নির্দেশনা বাস্তবায়নে বারবার আপনাদের ডাকতে হয়। আমরা নিজেরাই লজ্জা পাচ্ছি। পরিবেশ দূষণ রোধে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা আগামী ৫ জানুয়ারি জানান।’

পরে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন চেয়ে আমরা একটি আবেদন করেছিলাম। সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত পরিবেশ অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশনসহ সব পক্ষের কাছে জানতে চেয়েছেন।’

এর আগে ‘বছরে ৩১৭ দিন মারাত্মক দূষিত থাকে ঢাকার বায়ু’ শিরোনামে জাতীয় দৈনিকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, দূষণের মানমাত্রা বিবেচনায় বছরের বেশির ভাগ সময় ‘অস্বাস্থ্যকর’ থাকে রাজধানীর বাতাস। মাঝেমধ্যে এটা ‘বিপজ্জনক’ পর্যায়ে গিয়েও ঠেকে। বিশেষত শীতকালে বায়ুদূষণ পরিস্থিতি থাকে সবচেয়ে খারাপ। ৪৮ দিন ছাড়া বছরের বাকি সময় (৩১৭ দিন) ঢাকার বাতাস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্মল বায়ুর মানমাত্রার চেয়ে খারাপ থাকে। এক গবেষণায় উঠে এসেছে, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে শীতকালে ঢাকার বাতাস ১৬ গুণ বেশি দূষিত থাকছে।

পরে ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে উচ্চ আদালতের যে ৯ দফা নির্দেশনা রয়েছে, তার বাস্তবায়নের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। বায়ুদূষণ রোধে ৯ দফা নির্দেশনা দিয়ে ২০২০ সালে রায় দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত।

৯ দফা নির্দেশনায় বলা হয়Ñ১. ঢাকা শহরের মধ্যে বালি বা মাটি বহনকারী ট্রাকগুলোকে ঢেকে পরিবহন করতে হবে; ২. যেসব জায়গায় নির্মাণকাজ চলছে, সেসব জায়গার কনট্রাকটররা তা ঢেকে রাখবে; ৩. এছাড়া ঢাকার সড়কগুলোয় পানি ছিটানোর যে নির্দেশ ছিল, সে নির্দেশ অনুযায়ী যেসব জায়গায় এখনও পানি ছিটানো হচ্ছে না, সেসব এলাকায় পানি ছিটানোর ব্যবস্থা নিতে হবে; ৪. সড়কের মেগা প্রজেক্টের নির্মাণকাজ এবং কার্পেটিংয়ের যেসব কাজ চলছে, সেসব কাজ যেন

আইনকানুন এবং চুক্তির টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন মেনে করা হয়, সেটা নিশ্চিত করার নির্দেশ; ৫. যেসব গাড়ি কালো ধোঁয়া ছাড়ে, সেগুলো জব্দ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া ৬. ‘সড়ক পরিবহন আইন’ ২০১৮’ অনুযায়ী রাস্তায় চলাচলকারী গাড়ির ইকোনমিক লাইফ নির্ধারণ করতে হবে এবং যেসব গাড়ি পুরোনো হয়ে গেছে, সেগুলো চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের নির্দেশ; ৭. যেসব ইটভাটা লাইসেন্সবিহীনভাবে চলছে, সেগুলোর মধ্যে যেগুলো এখনও বন্ধ করা হয়নি, সেগুলো বন্ধ করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ; ৮. পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া টায়ার পোড়ানো এবং ব্যাটারি রিসাইকিলিং বন্ধের নির্দেশ এবং ৯. মার্কেট এবং দোকানের বর্জ্য প্যাকেট করে রাখতে এবং তা মার্কেট ও দোকান বন্ধের পরে সিটি করপোরেশনকে ওই বর্জ্য অপসারণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এদিকে বায়ুদূষণ রোধে আজ বুধবার থেকে বিশেষ অভিযান চালানোর নির্দেশনা দিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। এছাড়া এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনে তিনি অভিযানে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানান।

গতকাল নিজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের এ নির্দেশনা দেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরে বর্তমানে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। তাদের মাধ্যমে আজ বুধবার থেকেই বায়ুদূষণকারী প্রতিষ্ঠান ও যানবাহনের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে। অভিযানের সংখ্যা ও পরিধি বাড়াতে জরুরি ভিত্তিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পদায়নের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানাতে বলেছেন তিনি। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য দিতে জননিরাপত্তা বিভাগকে অনুরোধ করেন।

তিনি বলেন, দেশের বায়ুদূষণের এ পরিস্থিতি কোনো অবস্থায় কাম্য নয়। তাই বায়ুদূষণ রোধে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে কার্যকর আইনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

পরিবেশমন্ত্রী এ সময় হাইড্রলিক হর্ন ও শব্দদূষণ বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালককে নির্দেশনা দেন।

Leave a Reply