চলতি বছর বাড়তি খরচে তহবিল সংগ্রহে বাধ্য হবে ব্যাংকগুলো। কারণ উচ্চ মূল্যস্ম্ফীতির ফলে ব্যাংকে আমানতের প্রবৃদ্ধি এবং সুদ বাবদ নিট আয় কমে যাওয়ায় তারল্য প্রবাহের ওপর চাপ অব্যাহত থাকতে পারে। আর তহবিল ব্যয় বাড়লে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ব্যাংকগুলোর সার্বিক মুনাফায়।
বাংলাদেশের ব্যাংক খাত নিয়ে গ্রাহকদের কাছে পাঠানো নোটে এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ক্রেডিট রেটিং ও আর্থিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান মুডিস ইনভেস্টরস সার্ভিস। বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
মুডিসের নোটে বলা হয়, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো তারল্য প্রবাহে যে সমস্যা মোকাবিলা করছে, তা ২০২৩ সালেও পুরোপুরি এড়ানো সম্ভব নাও হতে পারে। কারণ ব্যাংকে আমানতের প্রবৃদ্ধির ওপর উচ্চ মূল্যস্ম্ফীতির প্রভাব অব্যাহত থাকতে পারে। সেই সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তার কারণে রপ্তানি আয় কমে যেতে পারে। যেটি বৈদেশিক মুদ্রার তারল্য প্রবাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। মুডিসের ধারণা, এ বছর বাংলাদেশের মূল্যস্ম্ফীতি হতে পারে ৭ থেকে ৮ শতাংশ। যেটি করোনাপূর্ব সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। ওই সময়ে মূল্যস্ম্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৫ থেকে ৬ শতাংশের মতো।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা মাত্র ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি। সাম্প্রতিক কোনো বছরে আমানতে এত কম প্রবৃদ্ধি হয়নি। উচ্চ মূল্যস্ম্ফীতির কারণে মানুষের সঞ্চয় কমে যাওয়াই এর প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর তহবিল সংগ্রহের খরচ বেড়ে গেছে। আমানত টানতে আগের তুলনায় কিছুটা বাড়তি সুদ গুনতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ডিসেম্বর শেষে আমানতের গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ে এটি ছিল ৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ।
মুডিস বলেছে, উচ্চ মূল্যস্ম্ফীতির পাশাপাশি ডলার সংকট এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে ২০২২ সালে ব্যাংক খাতে তারল্য প্রবাহে সমস্যা দেখা দেয়। রোপো ও আন্তঃব্যাংক তহবিল জোগানের মাধ্যমে তারল্য পরিস্থিতির উন্নতির চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মুডিস মনে করছে, উচ্চ মূল্যস্ম্ফীতির পাশাপাশি উচ্চ চাহিদা ও মুদ্রা সংকোচনের কারণে মূলত ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যয় বেড়েছে। এ অবস্থায় ব্যাংকগুলোর সুদ বাবদ নিট আয়সহ সার্বিক মুনাফা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারল্যের ছোট পরিসর এবং ব্যবসায়িক কাঠামোর কারণে বেশি ঝুঁকিতে থাকবে ইসলামী ব্যাংকগুলো।