চীন ও ভারতের পর এবার রাশিয়া থেকে তেল ও গ্যাস কেনার ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করার পর পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। এতে রাশিয়ার তেল-গ্যাসের বাজার সংকুচিত হয়ে পড়ে। এরপর চীন ও ভারত রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল ও গ্যাস আমদানি বাড়ায়। তখন আমদানি বাড়ায় ভারত। রেকর্ড পরিমাণ রুশ জ্বালানি কিনেছে দেশ দুটি। এবার ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানও রুশ তেল ও গ্যাস কিনতে যাচ্ছে। খবর: রয়টার্স।
ইসলামাবাদে রাশিয়ার জ্বালানি মন্ত্রী নিকোলাই শুলগিনভের তিন দিনের সফর শেষে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, পারস্পরিক অর্থনৈতিক সুবিধা নিশ্চিত করার শর্তে পাকিস্তান মার্চের শেষের দিকে রাশিয়া থেকে তেল ও গ্যাস আমদানি শুরু করবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে, অর্জিত প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্যগুলোর ওপর ঐকমত্যের পর তেল ও গ্যাস বাণিজ্য লেনদেন এমনভাবে গঠন করা হবে যাতে উভয় দেশের জন্য পারস্পরিক অর্থনৈতিক সুবিধা হয়। প্রক্রিয়াটি মার্চে শেষ হবে। মিত্র দেশের মুদ্রায় তেল ও গ্যাসের মূল্য পরিশোধে সম্মত হয়েছে পাকিস্তান।
অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে উল্লেখযোগ্যহারে ইউরোপে রুশ জ্বালানি রপ্তানি কমেছে। এ ক্ষতিপূরণের জন্য দেশটি বিকল্প বাজার খুঁজছে। এক্ষেত্রে এশিয়া তাদের প্রথম পছন্দ।
রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল রপ্তানিতে ডিসেম্বর থেকে ইউরোপীয় সামুদ্রিক নিষেধাজ্ঞা এবং ইইউ, জি-৭ ও অস্ট্রেলিয়ার নির্ধারিত মূল্যসীমার পদক্ষেপের কারণে মস্কো উল্লেখযোগ্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে রাশিয়া ঘোষণা করেছে, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মূল্যসীমা মেনে চলা বিদেশি দেশগুলোয় তারা তেল বিক্রি নিষিদ্ধ করবে।
পাকিস্তান সরকার গত ডিসেম্বরের গোড়ার দিকে ঘোষণা দিয়েছিল, জ্বালানি সংকটে থাকা পাকিস্তানে কম দামে জ্বালানি তেল রপ্তানি করতে সম্মত হয়েছে রাশিয়া।
পাকিস্তান উপসাগরীয় মিত্র দেশগুলো থেকে বেশিরভাগ জ্বালানি আমদানির ওপর নির্ভরশীল। দুর্বল অর্থনীতি, অব্যবস্থাপনা ও স্টোরেজ সুবিধার অভাবসহ বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন ধরে দেশটি জ্বালানি ঘাটতিতে পড়েছে। এ শীতে লোডশেডিং দেশীয় গৃহস্থালি ও শিল্পে প্রভাব ফেলেছে। যার মধ্যে পাকিস্তানের অন্যতম বৃহত্তম শিল্প টেক্সটাইল উৎপাদন এবং কিছু প্ল্যান্ট সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। এ শিল্প খাতে নিয়োজিত অনেক কর্মী চাকরি হারিয়েছেন। অথচ বিশ্বে অন্যতম বড় টেক্সটাইল পণ্য উৎপাদনকারী দেশটি ২০২১ সালে ১৯ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল, যা মোট রপ্তানির অর্ধেকের বেশি ছিল। রিজার্ভ কমে যাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছে পাকিস্তানের অর্থনীতি। অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে বেড়েছে খাদ্যপণ্যের দাম। সবকিছু মিলিয়ে এখন পাকিস্তানজুড়ে চলছে হাহাকার।
এদিকে গত সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে জানা যায়, রাশিয়ার কাছ থেকে এক বছর আগের তুলনায় ৩৩ গুণ বেশি তেল কিনছে ভারত। গত ডিসেম্বরে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল আমদানিকারক দেশ ভারত গড়ে প্রতিদিন ১ কোটি ২০ লাখ ব্যারেল তেল রাশিয়ার কাছ থেকে কিনেছে, যা নভেম্বরের তুলনায় ২৯ শতাংশ বেশি।
বেশ কয়েক মাস আগে ভারতের তেল সরবরাহকারী হিসেবে শীর্ষ দেশ ছিল ইরাক ও সৌদি আরব। বর্তমানে এ স্থান দখল করে নিয়েছে রাশিয়া।
ওদিকে রাশিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি তেল কিনছে চীন। দেশটির কাস্টমসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের মে মাসে রাশিয়া থেকে প্রায় ৮৪ লাখ ২০ হাজার টন জ্বালানি তেল আমদানি করে চীন। এর দাম ৭৪৭ কোটি ডলার। আগের মাসে রাশিয়া থেকে তেল আমদানিতে চীন যে অর্থ দিয়েছিল, তার চেয়ে এটা প্রায় ১০০ কোটি ডলার বেশি। অপরদিকে চীন মে মাসে সৌদি আরব থেকে তেল আমদানি করে ৭৮ লাখ ২০ হাজার টন। সেই থেকে রেকর্ড পরিমাণ তেল কিনছে চীন, যা অব্যাহত রয়েছে। পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার পর চীন ও রাশিয়া ঘোষণা দেয়, দেশ দুটির মধ্যকার সম্পর্কে কোনো সীমারেখা না থাকবে না। একই পথে হাঁটতে চলেছে অর্থনৈতিক সংকটে থাকা পাকিস্তানও।