কয়লার দাম ও বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি পর্যালোচনায় উচ্চ পর্যায়ের কমিটি

কয়লার দাম ও বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি পর্যালোচনায় উচ্চ পর্যায়ের কমিটি

২০০৯ সাল থেকে পরবর্তী কয়েক বছর তেলভিত্তিক কুইক রেন্টাল স্থাপনে গুরুত্ব দেয়া হয়। তবে তেলভিত্তিক (ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলচালিত) এসব কেন্দ্র থেকে কয়লার দিকে ক্রমেই সরে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এক বছরের মধ্যে বেশকিছু কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন শুরু করবে। তবে একেক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তির ধরন একেক রকম। এতে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় ও ক্রয়মূল্য নিয়ে বিপাকে পড়েছে সরকার।

বর্তমানে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ আসছে। আগামী মাসে আসার কথা আদানির বিদ্যুৎ। পূর্ণোদ্যমে উৎপাদন শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। শিগগিরই উৎপাদনে আসবে এসএস পাওয়ার ও বরিশাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র। উৎপাদন শুরু করা ও পাইপলাইনে থাকা এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা আমদানি করা হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন উৎস থেকে। দামও পড়ছে ভিন্ন ভিন্ন। এর পরিপ্রেক্ষিতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর চুক্তি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের সচিবকে আহ্বায়ক করে গঠিত ৯ সদস্যের কমিটি শিগগিরই এ বিষয়ে কাজ শুরু করবে। আজ বিদ্যুৎ বিভাগে এ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ওই কমিটি আদানিসহ সব বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি (পিপিএ), কয়লার দাম ও কেনার উৎস ইত্যাদি পর্যালোচনা করবে।

সূত্র জানায়, সরকারি, বেসরকারি ও যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়িত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কয়লা আমদানির জন্য বিদ্যমান আমদানি চুক্তিসমূহের সংশ্লিষ্ট আমদানি প্রক্রিয়া ও সরবরাহ পদ্ধতি-সংক্রান্ত কার্যাবলি পর্যালোচনার নিমিত্তে গঠিত কমিটি কাজ করবে। কমিটির সদস্য-সচিব করা হয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের উপসচিবকে (উন্নয়ন-৫)।

কমিটির অন্যান্য সদস্যের মধ্যে রয়েছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান, বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (সমন্বয়), প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক পর্যায়ের একজন প্রতিনিধি, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের প্রতিনিধি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের প্রতিনিধি, পিডিবির প্রধান প্রকৌশলী (প্রাইভেট জেনারেশন) এবং সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎকেন্দ্রের/কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

কমিটি গঠনের আদেশে বলা হয়েছে, সদস্যদের বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট সভায় উপস্থিত থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করবেন। এছাড়া কমিটি চাইলে এক বা একাধিক সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে।

কমিটির কার্যপরিধির মধ্যে রয়েছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কয়লা সরবরাহ চুক্তি বা বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি (পিপিএ) অনুযায়ী কয়লার দাম নির্ধারণ প্রক্রিয়া (মেকানিজম) ও কয়লা কেনার উৎস দেশের কয়লার দামের ইনডেক্স বিবেচনা করে স্পেসিফিকেশনের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লার দাম পর্যালোচনা করবে। পাশাপাশি কয়লা সরবরাহ বা এলসি খোলা অথবা আমদানি অনুমতির সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সুপারিশ প্রদান করবে।

তথ্যমতে, গত (২০২১-২২) অর্থবছর উৎপাদিত বিদ্যুতের ছয় দশমিক ৩৬ শতাংশ আসে কয়লাচালিত কেন্দ্রগুলো থেকে। চলতি অর্থবছর তা বেড়ে দাঁড়াবে ১৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ (আদানি ছাড়া)। আর আগামী অর্থবছর কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে পাওয়া যাবে ২৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ বিদ্যুৎ। তবে আদানি বিবেচনা করলে তা ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।

এদিকে পিডিবির এক বিশ্লেষণে দেখা যায়, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার হলে জ্বালানি ব্যয় পড়বে ইউনিটপ্রতি ১২ দশমিক ৯৯ সেন্ট। আর জ্বালানি-বহির্ভূত ব্যয় (ক্যাপাসিটি চার্জ) পড়বে চার দশমিক ২১ সেন্ট। অর্থাৎ গড় উৎপাদন ব্যয় পড়বে ১৭ দশমিক ২০ সেন্ট। দেশীয় মুদ্রায় এ ব্যয় পড়বে ১৮ টাকা ৪০ পয়সা (এক ডলার=১০৬.৯৫ টাকা ধরে)।

যদিও বরিশাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে এ ব্যয় পড়বে ১৭ দশমিক ৬২ সেন্ট বা ১৮ টাকা ৮৪ পয়সা। এর মধ্যে জ্বালানি ব্যয় পড়বে ইউনিটপ্রতি ১৩ দশমিক ৬২ সেন্ট। আর জ্বালানি-বহির্ভূত ব্যয় (ক্যাপাসিটি চার্জ এবং অপারেশন ও মেইনটেইনেন্স চার্জ) পড়বে চার সেন্ট। আর রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন শুরুর পর জ্বালানি ব্যয় পড়বে ইউনিটপ্রতি ১৪ দশমিক চার সেন্ট ও জ্বালানি-বহির্ভূত ব্যয় (ক্যাপাসিটি চার্জ) চার দশমিক ৮৫ সেন্ট। অর্থাৎ গড় উৎপাদন ব্যয় পড়বে ১৮ দশমিক ৮৯ সেন্ট বা ২০ টাকা ২০ পয়সা।

অন্যদিকে এসএস পাওয়ার পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন শুরু করলে কেন্দ্রটিতে জ্বালানি ব্যয় পড়বে ইউনিটপ্রতি ১৪ দশমিক ৩৭ সেন্ট। আর জ্বালানি-বহির্ভূত ব্যয় (ক্যাপাসিটি চার্জ এবং অপারেশন ও মেইনটেইনেন্স চার্জ) পড়বে চার দশমিক ৬০ সেন্ট। অর্থাৎ গড় উৎপাদন ব্যয় পড়বে ১৮ দশমিক ৯৭ সেন্ট বা ২০ টাকা ২৯ পয়সা। এ ছাড়া ভারতের আদানির কেন্দ্রটিতে জ্বালানি ব্যয় পড়বে ইউনিটপ্রতি ১৮ দশমিক ৩৪ সেন্ট। আর জ্বালানি-বহির্ভূত ব্যয় (ক্যাপাসিটি চার্জ এবং অপারেশন ও মেইনটেইনেন্স চার্জ) পড়বে চার দশমিক ৩৭ সেন্ট। অর্থাৎ গড় উৎপাদন ব্যয় পড়বে ২২ দশমিক ৭১ সেন্ট বা ২৪ টাকা ২৯ পয়সা।

Leave a Reply