প্রতিষ্ঠান বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে। খোলাবাজারে বিক্রি করে দেয় কাঁচামাল। এতে ফাঁকি হয় কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। সে জন্য প্রতিষ্ঠানকে কাটিং তদারকির শর্ত দিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। সেই শর্তে হাউস থেকে ছাড় হয়েছে ২৭টি বন্ড সুবিধার কাপড়ের চালান। যাতে ছিল প্রায় ২২ কোটি টাকার কাপড়। কিন্তু প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ কাটিং তদারকির শর্তকে থোড়াই কেয়ার করেনি। সব কাপড় খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন; যাতে প্রযোজ্য শুল্ককর প্রায় ২০ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে বন্ড কর্মকর্তারা বন্ড সুবিধার কোনো কাপড় পায়নি। গাজীপুরের মেসার্স ম্যাট্রিক্স স্টাইলস লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের এমন অভিযোগ উঠেছে। বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করায় প্রতিষ্ঠানকে দাবিনামা-সংবলিত কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করেছে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট, ঢাকা (উত্তর)। সম্প্রতি এই নোটিশ জারি করা হয়। এনবিআর সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। তবে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এনবিআর সূত্রমতে, গাজীপুর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ডেগেরচালা এলাকার বন্ডেড ও শতভাগ পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ম্যাট্রিক্স স্টাইলস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালের ১৭ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৩ জুলাই পর্যন্ত প্রায় দেড় বছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস দিয়ে ২৭টি বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে বন্ড সুবিধায় ফেব্রিক্স বা কাপড় আমদানি করে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বন্ড সুবিধার কাপড় খোলাবাজারে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। সে জন্য কাস্টম হাউস শতভাগ কাটিং তদারকির শর্তে ২৭টি চালান ছাড় দেয়। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান সব কাপড় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে প্রতিষ্ঠানের বন্ডেড ওয়্যারহাউসে আনবেন। সেখান থেকে রপ্তানির অর্ডার অনুযায়ী কাটিং করবেন। আর সংশ্লিষ্ট বন্ড কমিশনারেটের কর্মকর্তারা সেই কাটিং তদারকি করবেন। কিন্তু কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট, ঢাকা (উত্তর) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারেন প্রতিষ্ঠানের ওয়্যারহাউসে কাপড় নেই। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নথিতে বন্ড সুবিধার এই কাপড়ের বিষয়ে কোনো প্রতিবেদন পায়নি কমিশনারেটের কর্মকর্তারা। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রিভেন্টিভ টিম গঠন করে বন্ড কমিশনারেট।
সূত্র আরও জানায়, প্রিভেন্টিভ টিমের সদস্যরা সম্প্রতি ম্যাট্রিক্স স্টাইলসের কারখানা ও বন্ডেড ওয়্যারহাউস সরেজমিন পরিদর্শন করেন। এ সময় প্রতিষ্ঠানের ২৭টি চালানের মাধ্যমে আমদানি করা কাপড় ওয়্যারহাউসে মজুত পাওয়া যায়নি। এসব কাপড় প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে অপসারণ করে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে। প্রিভেন্টিভ টিমের সদস্যরা অননুমোদিত ওয়্যারহাউসে ১ লাখ ১০৩ গজ মেশ ও টেরি ফেব্রিক্স পেয়েছে, যা প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে অপসারণের জন্য মজুত করেছে। অবৈধভাবে অপসারিত কাঁচামাল বা কাপড়ের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ২২ কোটি ৩৪ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩০ টাকা; যার ওপর প্রযোজ্য শুল্ককর ১৫ কোটি ৫৫ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩০ টাকা। আর অবৈধ অপসারণের জন্য অননুমোদিত ওয়্যারহাউসে মজুত করা কাপড়ের ওপর প্রযোজ্য শুল্ককর ৪ কোটি ৪০ লাখ ৬৭ হাজার ৮৬৭ টাকা। প্রযোজ্য মোট শুল্ককর ১৯ কোটি ৯৬ লাখ ১ হাজার ১৯৮ টাকা। মূলত শুল্ককর ফাঁকি দিতেই প্রতিষ্ঠান এই কাপড় অবৈধভাবে অপসারণ করে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে ধারণা করছেন প্রিভেন্টিভ টিমের সদস্যরা। কাস্টমস আইন অনুযায়ী, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে কাঁচামাল অবৈধভাবে অপসারণ করায় প্রতিষ্ঠানকে এই শুল্ককর পরিশোধে দাবিনামা সংবলিত কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হয়েছে। সম্প্রতি এই নোটিশ জারি করা হয়; যাতে লিখিতভাবে জবাব দিতে প্রতিষ্ঠানকে ৩০ দিনের সময় দেয়া হয়েছে। অন্যথায় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।