গ্রাহকের কলড্রপ সমস্যা। সমাধানের জন্য গ্রাহক হেল্পলাইনে ফোন করলেন। হেল্পলাইন থেকে কোনো সুরাহা পেলেন না। গ্রাহককে লিখিত অভিযোগ করতে বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী গ্রাহক মোবাইল অপারেটরের অ্যাপে অভিযোগ করলেন। অভিযোগের দুমাস পরও কোনো সমাধান পাননি গ্রাহক। গ্রাহক নিজের টাকা নষ্ট করে ওই অপারেটরের নেটওয়ার্ক সমস্যা সমাধানে আবার হেল্পলাইনে ফোন করলেন। অপারেটরের কাছ থেকে জানানো হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। এর মধ্যে কেটে গেল ৯ মাস ১৪ দিন। আর ওই দিন গ্রাহককে জানানো হলো, নেটওয়ার্ক সমস্যার সমাধান হয়েছে। তবে ভুক্তভোগী ওই গ্রাহকের অভিযোগ, এখনও নেটওয়ার্ক সমস্যার পুরোপুরি সমাধান হয়নি। দেশের বৃহৎ বেসরকারি মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন এক গ্রাহক। আধুনিকতার এমন যুগে এসে এত দীর্ঘ সময় ধরে সেবা না পাওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন গ্রামীণফোনের সিম ব্যবহারকারী একাধিক গ্রাহক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রামীণফোনের কাছে গ্রাহকরা এমন আচরণ প্রত্যাশা করে না। একটি অভিযোগ নিষ্পত্তিতে এত দিন লেগে যাওয়া মানে ওই অপারেটরের সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
রাজধানীর খিলগাঁওয়ের নন্দীপাড়া হাফিজ উদ্দীন মাস্টার রোডের বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী শামীম আহমেদ। তিনি দীর্ঘদিন গ্রামীণফোনের সিম (০১৭১০-৩৫৪৬৯৩) ব্যবহার করে আসছেন। চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি মাই জিপি অ্যাপের মাধ্যমে লগইন করে ‘কলড্রপ’-সংক্রান্ত একটি অভিযোগ করেন। অভিযোগ আইডি নম্বর-১৬৬১৯২। সেদিন সেই অ্যাপে অভিযোগের অবস্থা দেখায় অমীমাংসিত (পেন্ডিং)। পরে তিনি ভাবেন হয়তো দু-এক দিনের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে। অপেক্ষায় থাকেন শামীম আহমেদ। তবে এক দিন দুই দিন পার হলেও কোনো সাড়া মেলে না।
শামীম আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমার ব্যবহƒত গ্রামীণ সিমে প্রচুর কলড্রপ হওয়া শুরু হয়। অনেক জরুরি কলড্রপ হতে শুরু করে। আমি বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। আমার বস প্রায়ই কাজের জন্য আমাকে ফোন করেন। কিন্তু প্রায়ই হয় আমি তার কথা শুনি না, অথবা তিনি আমার কথা শোনেন না। এতে করে অনেক জরুরি বিষয়েও কথা অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। তবে গ্রামীণফোন কোম্পানি থেকে আমাকে বিটিআরসির নিয়ম অনুযায়ী ৩০ সেকেন্ড করে ফেরত দিয়ে দেয়া হতো। কিন্তু আমি ৩০ সেকেন্ড দিয়ে কী করব। আমার তো গুরুত্বপূর্ণ অনেক কথা হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি একসময় অতিষ্ঠ হয়ে আমার স্মার্টফোনে ব্যবহƒত মাই জিপি অ্যাপে লগ ইন করে একটি অভিযোগ করি। আমি আশা করেছিলাম ২৪ ঘণ্টার ভেতরে এর একটা সমাধান পাব। কিন্তু দুই মাস চলে গেলেও এর কোনো সুরাহা হয়নি। মাই জিপি অ্যাপে অভিযোগের অবস্থারও কোনো পরিবর্তন হয়নি। তখনও দেখায় স্ট্যাটাস পেন্ডিং। পরে আমি হেল্পলাইন নম্বর ১২১-তে ফোন করি। তারা আমাকে জানায়, আমাকে গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে ফোন দেয়া হবে। আমি অপেক্ষা করতে থাকি। পরে ১৫ দিন অতিবাহিত হলেও কোনো ফোন না এলে আমি আবার ১২১-এ ফোন করি। তখনও আমার অভিযোগের স্ট্যাটাস পেন্ডিং। পরে সেখান থেকে আবারও বলা হয়, সমস্যা সমাধানে গ্রামীণফোন থেকে ফোন করা হবে এবং আমার মোবাইল ফোনটি পরিবর্তনের পরামর্শ দেয়া হয়। আমি মোবাইল পরিবর্তন করে অন্য মোবাইলে আমার সিমটি লাগিয়ে দেখি একই সমস্যা। কিন্তু আমার অন্য একটি গ্রামীণ সিম আমার একই ফোনে লাগিয়ে দেখি যে কোনো সমস্যা নেই। এরপর বুঝতে পারি আমার সেই সিমটির সমস্যা।’
তিনি আরও বলেন, ‘একদিকে সিমে কলড্রপ সমস্যা, আর অন্যদিকে গ্রামীণফোন থেকেও কোনো সাড়াশব্দ নেই। এতে আমি চরমভাবে হতাশ হই। এরপর আমি নিজ থেকেই সিদ্ধান্ত নিই যে সিমটা রিপ্লেস করার। পরে জিপির একটি সেন্টার থেকে আমি ২৫০ টাকা খরচ করে সিম
রিপ্লেস করি। এরপর কলড্রপ সমস্যা থেকে কিছুটা পরিত্রাণ মেলে। তবে সমস্যার পুরো সমাধা হয়নি। কিন্তু সেই যে মাই জিপি অ্যাপে অভিযোগ করি, সেই অভিযোগের স্ট্যাটাস আর পরিবর্তন হয়নি। তখনও স্ট্যাটাস পেন্ডিং দেখায়। পরে চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর অর্থাৎ অভিযোগের ৯ মাস ১৪ দিন পর গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে আমার কাছে ফোন আসে। আমার এলাকায় গ্রামীণফোন নেটওয়ার্ক-সংক্রান্ত যে সমস্যা ছিল সেটা সমাধান
করে ফেলা হয়েছে। তবে আরও সমস্যা থাকলে আবারও জানাতে বলা হয়েছে।’
শামীম আহমেদ বলেন, ‘আমি যে অভিযোগ করেছিলাম, তা দীর্ঘদিন ধরে পেন্ডিং থাকলেও গ্রামীণফোন থেকে কোনো প্রকার সাড়া না পাওয়ায় একজন ব্যবহারকারী হিসেবে মর্মাহত হয়েছি। যদি গ্রামীণ থেকে ফোন করে আমাকে সিম রিপ্লেসমেন্টের পরামর্শ দেয়া হতো তাহলে আমার ভুগতে হতো না। আমি এই দীর্ঘ ৯ মাস ১৪ দিন অনেক ভুগেছি এই কলড্রপের সমস্যায়। আমার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কলের কথা মিস হয়েছে। দেশের সর্ববৃহৎ একটি মোবাইল ফোন অপারেটর হিসেবে তাদের কাছ থেকে প্রত্যাশা এমন হতে পারে না।’
অপরদিকে ইকরাম হোসেন নামে আরেকজন বেসরকারি চাকরিজীবী শেয়ার বিজের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি অপারেটর পরিবর্তন করে গ্রামীণফোনে এসেছি। কিন্তু বিটিসিএল নম্বর থেকে ফোন আসে না। ব্যাংক থেকে এসএমএস আসে না। এগুলোর জন্য অনেক ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘জিপিতে এসেছিলাম নিরবচ্ছিন্ন নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত হওয়ার জন্য। কিন্তু এখন উল্টো সমস্যা ভোগ করতে হচ্ছে। জিপির কাছ থেকে আমরা গ্রাহকরা আরও ভালো সেবা আশা করি। ঝামেলাবিহীন সেবা চাই।’ এছাড়া আরও বেশ কয়েকজন গ্রামীণফোন সিম ব্যবহারকারী নেটওয়ার্ক সমস্যা নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ই-মেইলে গ্রামীণফোনের হেড অব কমিউনিকেশনস শারফুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী শেয়ার বিজকে জানায়, ‘গ্রাহক-কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রামীণফোন প্রত্যেক গ্রাহকের অভিযোগ অত্যন্ত গুরুত্বসহ বিবেচনা করে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে অভিযোগের যথাযথ সমাধানের চেষ্টা করে। কিছু ক্ষেত্রে নেটওয়ার্কজনিত জটিল সমস্যা সমাধানে নানা ধরনের বাস্তবিক বাহ্যিক কারণে সময়ের প্রয়োজন হয়, যা প্রকারভেদে অনেক জটিল হয় এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধান প্রয়োজন হয়।’ আরও জানানো হয়, ‘দেশের ১ নম্বর এবং সবচেয়ে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক হিসেবে গ্রামীণফোন বিটিআরসির নির্দেশনা মেনে গ্রাহকদের সর্বোচ্চ মানের সেবা প্রদান করে। আমাদের কলড্রপের হার মাত্র ০.৩ শতাংশ (এক হাজার কলে মাত্র তিনটি), যা অপারেটরদের জন্য টেলিকম লাইসেন্সগুলোয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত দুই শতাংশের সর্বোচ্চ সীমা থেকে অনেক কম। আমরা সবসময় আমাদের নেটওয়ার্কের সক্ষমতা উন্নত করার জন্য সচেষ্ট থাকি, কিন্তু আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরেও কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে রিপিটার/জ্যামারের বেআইনি ব্যবহার থেকে বাহ্যিক হস্তক্ষেপ, যা আমাদের সিগন্যালকে ব্লক করে, আমাদের টাওয়ারের সংযোগকে প্রভাবিত করেÑএমন তৃতীয় পক্ষের দ্বারা সৃষ্ট পূর্বনোটিশ ছাড়াই ঘনঘন এবং অপ্রত্যাশিতভাবে ফাইবার কাটা এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকা। আমরা এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে বিটিআরসি ও অন্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করছি।’
অভিযোগের বিষয়ে বিটিআরসির উপপরিচালক (মিডিয়া কমিউনিকেশন অ্যান্ড পাবলিকেশন উইং) জাকির হোসেন খান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘যেকোনো অপারেটরের একটি অভিযোগ নিষ্পত্তিতে এত দিন লাগার কথা নয়। তারপরও যেহেতু লেগেছে, সেহেতু গ্রাহকদের সুবিধার্থে বিটিআরসির একটি জরুরি সেবা নম্বর ১০০ রয়েছে। এতে কোনো গ্রাহক অভিযোগ করলে আমরা অভিযোগ সমাধানের জন্য ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।’