প্রারম্ভিক হ্যাশ নম্বর দিয়েই পণ্য চোরাচালান, কাস্টমসের মামলা

প্রারম্ভিক হ্যাশ নম্বর দিয়েই পণ্য চোরাচালান, কাস্টমসের মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদকঅ্যাসাইকুডা সিস্টেমে দাখিল করা হয়নি বিল অব এন্ট্রি। শুধু বিল অব এন্ট্রির প্রারম্ভিক নোটিং সংক্রান্ত # (হ্যাশ) নম্বর দাখিল করা হয়েছে। জানানো হয়নি কাস্টমসকে। পণ্য চালানের করা হয়নি শুল্কায়ন। অথচ বিমানের কার্গো কমপ্লেক্সের ওয়্যারহাউস থেকে চালানটি গায়েব করে দেয়া হয়েছে। আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের পারস্পরিক যোগসাজশে ওয়্যারহাউস থেকে চালানটি বের করা হয়েছে। মূলত চোরাচালানের উদ্দেশ্যে কোনো প্রক্রিয়া শেষ না করেই চালানটি বের করা হয়েছে। তবে ঢাকা কাস্টম হাউসের কর্মকর্তাদের তৎপরতায় অবশেষে চালানটির রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে। চোরাচালানের উদ্দেশ্যে পণ্য চালান বের করায় আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এই মামলা করা হয়। তবে ভুল স্বীকার করে পণ্য চালানটিতে সম্ভাব্য রাজস্ব হিসেবে এক কোটি ১০ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে আমদানিকারক। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, বনানীর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এনাম ট্রেডিং। প্রতিষ্ঠানটি ১০ জানুয়ারি বিমানে ১৩৯ কার্টন মোবাইল এলসিডি আমদানি করে। যার এয়ারওয়ে বিল নং-৮৬০-০৩২৭৪৭৩৬। আমদানি করা পণ্য বাংলাদেশ বিমানের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো কমপ্লেক্সের ওয়্যারহাউসে রাখা হয়। নিয়ম হলো প্রতিষ্ঠানের মনোনীত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট পণ্য খালাসে আমদানি করা পণ্যের বিল অব এন্ট্রি দাখিল করবে। সে অনুযায়ী কাস্টমস শুল্কায়ন প্রক্রিয়া শেষে চালানটি খালাস দেবে। শুল্কায়ন ছাড়া পণ্য খালাস হলে তার দায় বর্তাবে বিমানের কার্গো কমপ্লেক্সের ওয়্যারহাউসের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের ওপর। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোনো বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা হয়নি। তবে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করার প্রারম্ভিক নোটিং হিসেবে অ্যাসাইকুডা সিস্টেমে প্রতিষ্ঠানের মনোনীত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট # (হ্যাশ) নম্বর দাখিল করেছে।

সূত্র আরও জানায়, ঢাকা কাস্টম হাউসের প্রিভেন্টিভ টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কোনো প্রকার বিল অব এন্ট্রি ছাড়াই ওয়্যারহাউস থেকে চালানটির ১৩৯টি কার্টন পণ্য খালাস নিয়ে চলে গেছে। বিষয়টি কাস্টমসকে জানানো হয়নি। পরে পণ্য চালানের অবস্থান জানতে কার্গো কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপককে চিঠি দেয়া হয়। ব্যবস্থাপক জানায়, পণ্য চালানটি যে অবস্থানে থাকার কথা সেখানে নেই। পরে প্রিভেন্টিভ টিম সিঅ্যান্ডএফ মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি পণ্যচালান নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। এই বিষয়ে ঢাকা কাস্টম হাউসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (প্রিভেন্টিভ) মো. মেহেদী হাসান বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

যাতে বলা হয়, ১০ জানুয়ারি একটি পণ্য চালান দেশে আসে (এয়ারওয়ে বিল নং-৮৬০-০৩২৭৪৭৩৬)। আমদানি করা এই চালানটি শুল্ককর ফাঁকি দিয়ে ২৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ বিমানের কার্গো কমপ্লেক্সের ওয়্যারহাউস থেকে অপসারণ করা হচ্ছে বলে গোপন সংবাদ পাওয়া যায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কাস্টম হাউস প্রিভেন্টিভ টিম শাখা ও এয়ারফ্রেইট ইউনিট থেকে চালানটির খালাস স্থগিত করতে বিমান কার্গো কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপককে (আমদানি) চিঠি দেয়া হয়। এছাড়া চালানটির বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে কাস্টম হাউসকে অবহিত করতে বলা হয়।

আরও বলা হয়, চালানটির বিপরীতে কোনো বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা হয়নি। বিমানের কার্গো কমপ্লেক্সের ওয়্যারহাউসে পণ্য চালানটির অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য না পাওয়ায় অ্যাসাইকুডা থেকে চালানটির আইজিএম সংগ্রহ করা হয়। অ্যাসাইকুডা সিস্টেমে এয়ারওয়ে বিলের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সারাহ এন্টারপ্রাইজ বিল অব এন্ট্রির প্রারম্ভিক নোটিং সংক্রান্ত # (হ্যাশ) নম্বর দাখিল করা হয়েছে। হ্যাশ নম্বর সংবলিত বিল অব এন্ট্রির ড্রাফট কপিতে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের নাম উল্লেখ রয়েছে সারাহ এন্টারপ্রাইজ। ফলে পণ্যের অবস্থান সম্পর্কে জানার জন্য সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের মালিক সুলতান মাহমুদকে ২৪ জানুয়ারি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন যে, চালানটি কোনো ধরনের কাস্টমস

 প্রক্রিয়া শেষ না করেই বিমানের আমদানি কার্গো কমপ্লেক্স থেকে তিনি অবৈধভাবে অপসারণ করেছে এবং ওই চালানে ফাঁকি দেয়া শুল্ককর পরিশোধ করতে তিনি ইচ্ছুক। এই বিষয়ে তিনি একটি লিখিত স্বীকারোক্তি প্রদান করেন। পরে ২৫ জানুয়ারি সম্ভাব্য শুল্ককর হিসেবে এক কোটি ১০ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেন এবং জমার প্রমাণক কাস্টমসে দাখিল করেন। উল্লেখ্য, পরে অভিযুক্ত সুলতান মাহমুদ অসৎ উদ্দেশ্যে অপরাধের সাক্ষ্য বিনষ্ট করার জন্য # নম্বর সংবলিত বিল অব এন্ট্রির ড্রাফট কপিটি অ্যাসাইকুডা সিস্টেম থেকে ডিলিট করে ফেলেন।

প্রিভেন্টিভ টিমের চিঠির জবাবে বিমানের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) জানায়, ‘রেকর্ড অনুযায়ী উল্লিখিত পণ্য চালানটি ওয়্যারহাউসের ক্যানোপি (জিরো) এবং চার এলাকায় অবস্থান দেয়া ছিল। কিন্তু বাস্তবে পণ্যটি সেই অবস্থানে পাওয়া যাচ্ছে না।

এজাহারে বলা হয়, বিমানযোগে আমদানি করা সব পণ্য চালান রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বিমান বাংলাদেশের আমদানি কার্গো কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের। কাস্টমস প্রক্রিয়া ব্যতিরেকে বিমানের ওয়্যারহাউসে সংরক্ষিত পণ্য চালানগুলোর সেই কমপ্লেক্স থেকে খালাসের সুযোগ নেই। সার্বিক ঘটনায় প্রতীয়মান হয়, আমদানিকারক এনাম ট্রেডিং ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সারাহ এন্টারপ্রাইজ কর্তৃক পরস্পর যোজসাজশে আমদানি করা ১৩৯ কার্টন মোবাইল এলসিডি কোনো ধরনের কাস্টমস প্রক্রিয়া ব্যতিরেকে বিমানের কার্গো কমপ্লেক্স থেকে অবৈধভাবে অপসারণ করেছে। যেহেতু আমদানি করা পণ্য চালানের ক্ষেত্রে কোনো বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা হয়নি, সেহেতু এক্ষেত্রে কাস্টমস সংক্রান্ত কার্যক্রমের কোনো সুযোগ ছিল না। অর্থাৎ কাস্টমস কর্তৃক পণ্য পরীক্ষণ এবং শুল্কায়ন ব্যতীত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট চালানটি বিমান কার্গো কমপ্লেক্সের ক্যানোপি জিরো ও ক্যানোপি চার এলাকা থেকে অপসারণ করা হয়েছে। আমদানিকারক ও আমদানিকারকের মনোনীত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট পরস্পর যোজসাজশে আমদানি করা চালানের বিপরীতে বিল অব এন্ট্রি দাখিল না করে অর্থাৎ শুল্কায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন ব্যতীত গোপনীয়ভাবে পণ্য চালান অপসারণ করেছে। কাস্টমস আইন অনুযায়ী আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের এমন কার্যক্রম চোরাচালান হিসেবে বিবেচিত। সে জন্য তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইন অনুযায়ী তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়।

Leave a Reply