কয়লাভিত্তিক পাঁচ বিদ্যুৎকেন্দ্র
রেন্টাল-কুইক রেন্টাল থেকে ক্রমেই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দিকে ঝুঁকছে বাংলাদেশ। বর্তমানে উৎপাদনে রয়েছে দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে উৎপাদনে আসছে আরও তিনটি কেন্দ্র। সম্প্রতি এক বৈঠকে এ পাঁচটি কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়
কয়লাভিত্তিক পাঁচ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা পাঁচ হাজার ৫০৫ মেগাওয়াট। এগুলো পুরোদমে উৎপাদনে শুরু করলে মাসে প্রায় ৩৪১ কোটি ৫৮ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ ইউনিট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এজন্য ক্যাপাসিটি চার্জ, জ্বালানি ব্যয় এবং পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় (ভিওএমপি) বাবদ গুনতে হবে প্রায় ৬৬ কোটি ৫৯ লাখ ডলার বা সাত হাজার ১২২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। তবে বিদ্যুৎ না কিনলেও ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ মাসে গুনতে হবে প্রায় ১৫ কোটি ডলার।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগে আদানির প্রতিনিধির সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে খাতভিত্তিক বিশ্লেষণ করে পাঁচ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যয়ের হিসাব দেখানো হয়। এক্ষেত্রে প্রতি কেন্দ্রের সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার (৮৫ শতাংশ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টর) ধরে ব্যয় হিসাব করা হয়েছে। তবে কোনো কেন্দ্রে সক্ষমতার চেয়ে কম হারে উৎপাদন করা হলে জ্বালানি এবং ভিওএমপি কমবে।
পিডিবির তথ্যমতে, আগামী মার্চে ভারত থেকে আসার কথা আদানির গড্ডা কেন্দ্রের বিদ্যুৎ। ঝাড়খণ্ডে নির্মিত কয়লাচালিত এ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন করা হলে মাসে প্রায় ৯২ কোটি ৮২ লাখ ৬৮ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এতে কয়লার মূল্য বাবদ ব্যয় হবে প্রায় ১৭ কোটি তিন লাখ ডলার ও ভিওএমপি প্রায় ১১ লাখ ৩৫ হাজার ডলার। আর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হবে তিন কোটি ৯৫ লাখ ডলার। অর্থাৎ মোট ব্যয় হবে ২১ কোটি ৯ লাখ ডলার বা দুই হাজার ২৫৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা (এক ডলার = ১০৬.৯৫ টাকা)।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ২৩৪ মেগাওয়াট। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন করা হলে মাসে প্রায় ৭৬ কোটি ৫৬ লাখ ৯৭ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এজন্য কয়লা বাবদ ব্যয় হবে ১০ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। আর ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হবে তিন কোটি ৭১ লাখ ডলার। অর্থাৎ মোট ব্যয় হবে ১৪ কোটি ৪৬ লাখ ডলার বা এক হাজার ৫৪৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
এদিকে বাঁশখালীর এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টে উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ২২৪ মেগাওয়াট। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন করা হলে মাসে প্রায় ৭৫ কোটি ৯৪ লাখ ৯২ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এতে কয়লার মূল্য বাবদ ব্যয় হবে প্রায় ১০ কোটি ৯২ লাখ ডলার ও ভিওএমপি প্রায় ১৪ লাখ ১৪ হাজার ডলার। আর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হবে তিন কোটি ৩৫ লাখ ডলার। অর্থাৎ মোট ব্যয় হবে ১৪ কোটি ৪১ লাখ ডলার বা এক হাজার ৫৪১ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
অন্যদিকে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট। পূর্ণ সক্ষমতায় এ কেন্দ্রটিতে উৎপাদন করা হলে মাসে প্রায় ৭৭ কোটি ১৯ লাখ দুই হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এ বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার মূল্য বাবদ ব্যয় হবে প্রায় ১০ কোটি তিন লাখ ডলার। আর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হবে তিন দশমিক ২৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ মোট ব্যয় হবে ১৩ কোটি ২৮ লাখ ডলার বা এক হাজার ৪২০ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
বরিশাল ৩০৭ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন করা হলে মাসে প্রায় ১৯ কোটি চার লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ ইউনিট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এতে কয়লার মূল্য বাবদ ব্যয় হবে প্রায় দুই কোটি ৫৯ লাখ ডলার ও ভিওএমপি প্রায় ৬ লাখ ডলার। আর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হবে ৭০ লাখ ডলার। অর্থাৎ মোট ব্যয় হবে তিন কোটি ৩৫ লাখ ডলার বা ৩৫৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
হিসাব বিশ্লেষণে দেখা যায়, সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার হলে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বছরে গুনতে হবে ২৫৩ কোটি ১২ লাখ ডলার, রামপালে ১৭৩ কোটি ৫২ লাখ ডলার, বাঁশখালীতে ১৭২ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, পায়রায় ১৫৯ কোটি ৩৬ লাখ ডলার এবং বরিশাল কেন্দ্রের জন্য ৪০ কোটি ২০ লাখ ডলার। অর্থাৎ বছরে ব্যয় হবে ৭৯৯ কোটি ১৪ লাখ ডলার বা ৮৫ হাজার ৪৬৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যয়ের মধ্যে কয়লার দাম ও ভিওএমপি ডলারে পরিশোধ করতে হয়। আর ক্যাপাসিটি চার্জ ডলারের বিনিময় হার ধরে টাকায় পরিশোধ করা হয়। তবে কোম্পানিগুলো এ অর্থ আবার ডলারে রূপান্তর করে দেশের বাইরে নিয়ে যায়। তাই প্রত্যক্ষভাবে ডলারে বিল না দিলেও দেশের বাইরে ডলার চলে যাবে। এছাড়া ক্যাপাসিটি চার্জ যেদিন দাবি করা হয় সেদিন ডলারের রেট কম হলেও পরবর্তীতে তা বেড়ে গেলে বর্ধিত হারেই এ চার্জ পরিশোধ করতে হয়।
যদিও বাস্তবে কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেই সক্ষমতার পুরো বিদ্যুৎ কেনা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন পিডিবির কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, আদানির সঙ্গে বৈঠকে তাদের কয়লার উচ্চ দাম নিয়ে আপত্তি তোলা হয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের তুলনামূলক হিসাবের বিবরণী দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি কয়লার দাম আগে ঘোষণা করার কথা বলা হয়েছে। তাদের ঘোষণার ওপর নির্ভর করবে আদানির বিদ্যুৎ কেনা হবে কিনা বা কতটা কেনা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মাহবুুবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, আদানির বিদ্যুৎ মার্চে সরবরাহ শুরুর কথা রয়েছে। এর প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই বৈঠক হয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।