সবজি পরিবহনে খরচ বেড়েছে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা!

সবজি পরিবহনে খরচ বেড়েছে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা!

যশোরের বাজারে উঠতে শুরু করেছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, বেগুন, লাউ, শিম, কুমড়া, পটোলসহ নানারকম শীতের আগাম শাকসবজি। কিছুদিন আগেও শাকসবজির বাজার চড়া থাকলেও দু-তিন দিন আগে দাম কিছুটা কমেছিল। তবে বিএনপির ডাকা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির কারণে শাকসবজি পরিবহনে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। পরিবহনপ্রতি খরচ বেড়ে গেছে সাত থেকে আট হাজার টাকা। ভোগান্তিতে পড়েছেন চাষি ও সবজি ব্যবসায়ীরা। এর প্রভাব পড়ছে সারাদেশের ক্রেতাদের ওপর। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় শাকসবজির মোকাম যশোরের বারীনগর বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী ও চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।

জানা গেছে, প্রতিদিন বাজার বসলেও সপ্তাহের রোববার ও বৃহস্পতিবার বারীনগরে হাট বসে। ক্ষেতের চাষিরা এখানে নিয়ে আসেন শাকসবজি, যা ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার পাইকাররা কিনে নিয়ে যান। সাধারণত স্বাভাবিক সময়ে যেখানে তিন থেকে চার টন শাকসবজি ঢাকায় পাঠাতে খরচ হয় ১৬ হাজার টাকা, সেখানে অবরোধ কর্মসূচির কারণে পরিবহন খরচ বেড়ে ২২ হাজার টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। পাঁচ-ছয় টন শাকসবজি পাঠাতে স্বাভাবিক সময়ে ২২ হাজার টাকা খরচ হলে এখন সেটি ৩০ হাজারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।

মঙ্গলবার বারীনগর বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেগুনের কেজি বিক্রি হয়েছে ২৫-৩০ টাকা, মুলা ২২ থেকে ২৮ টাকা, শিম ৯০-৯৫ টাকা, পটোল ২৮-৩০ টাকা, লাউ ২২-২৫ টাকা ও পেঁপে ১৬ টাকা। বাজারে কথা হয় যশোর সদরের মথুরাপুর এলাকার গোলাম রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, দুই বিঘা জমিতে মুলা চাষ করেছেন তিনি। সপ্তাহখানেক ধরে বিক্রি করছেন। প্রথম দিকে প্রতি কেজি ৪০-৪৫ টাকা দরে বিক্রি করতে পারলেও মঙ্গলবার সর্বোচ্চ ২২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হয়েছে। পরিবহন খরচের ভয়ে পাইকারি ব্যবসায়ীরা মুলা কেনেননি। এতে তাকে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে।

সবজিচাষি আতিয়ার রহমান বলেন, ‘প্রতিদিন ৬০ থেকে ৮০টি লাউ আনি বাজারে। এই মৌসুমে প্রতিটি লাউ গড়ে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। আজকের বাজারে ২২ থেকে ২৫ টাকা বলেছেন পাইকাররা। গতকাল বিক্রি করেছিলাম প্রতিটি ৩০ টাকায়। পাইকাররা বলছেন, পরিবহন খরচ বেশি, এজন্য দাম কম।

বাজারে কথা হয় ঢাকাসহ আশপাশের জেলার সবজির পাইকার মো. মনির হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সবজি ঢাকায় পাঠানোয় কোনো সমস্যা নেই। সাধারণত আন্দোলনকারীরা শাকসবজির ট্রাক নিয়ে ঝামেলা করে না। কিন্তু ট্রাকের চালকরা ঝুঁকি নিতে চান না, এজন্য বেশি টাকা ভাড়া দাবি করেন। স্বাভাবিক সময়ে চার টন ও সাত টন সবজি পাঠাতে আমার যথাক্রমে ১৬ ও ২২ হাজার টাকা লাগলেও গত হরতাল ও অবরোধে একই পরিমাণ সবজি পাঠাতে ২২ থেকে ৩০ হাজার টাকা পরিবহন খরচ দিতে হচ্ছে।’

বাজারের অপর পাইকার আতিয়ার রহমান বলেন, ‘সোমবার দুই ট্রাক সবজি পাঠিয়েছি। আজও একই পরিমাণ পাঠিয়েছি। সবজি ঢাকায় পাঠাতে আমাদের বেশি টাকা খরচ করতে হয়। এখন গাড়িপ্রতি যে টাকা খরচ হচ্ছে, তা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে সাত-আট হাজার টাকা বেশি।’

তিনি বলেন, ‘যশোর থেকে ছেড়ে যাওয়া সবজির ট্রাক কামারখালীর ওয়াপদা, ফরিদপুর আর রাজবাড়ীর কিছু স্থানে থামায় চাঁদাবাজরা। সেখানে গাড়িপ্রতি তাদের ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা দিতে হয়।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শীতকালীন সবজিতে এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার এক-তৃতীয়াংশ আবাদ করেছেন যশোরের চাষিরা। জেলায় চলতি বছর সাড়ে ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আগাম শীতকালীন সবজি এরই মধ্যে বাজার উঠতে শুরু করেছে। প্রায় সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর জমিতে আগাম সবজির উৎপাদন হয়েছে। এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ৩৭ শতাংশ আবাদ হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে কৃষি বিভাগ। ধীরে ধীরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি সবজি উৎপাদনে যাবেন চাষিরা। যশোর সবজি উৎপাদনে সবসময়ই দেশের শীর্ষে অবস্থান করে। সারাদেশের মোট চাহিদার প্রায় ৬৫ শতাংশ সবজি উৎপাদিত হয় এই যশোরে। 

যশোর জেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, জেলায় এ বছর ৭৫০ হেক্টর জমিতে বাঁধাকপি, ৭৬০ হেক্টর জমিতে ফুলকপি, ৫০০ হেক্টর জমিতে টমেটো, ৫০০ হেক্টর জমিতে বেগুন, হেক্টর জমিতে পালংশাক ৩০৭, এক হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে মুলা, যথাক্রমে ৩০০ ও ২০০ হেক্টর জমিতে লাল ও সবুজ শাক এবং ৬৩০ হেক্টর জমিতে শিম আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ফলনে সাড়া ফেলেছে শিম।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর যশোরের উপপরিচালক সুশান্ত তরফদার বলেন, ‘এ বছর লক্ষ্যমাত্রার ৩৭ শতাংশ আবাদ ও উৎপাদন করা হয়েছে। অর্থাৎ তিন ভাগের এক ভাগ। আশা করি, পর্যায়ক্রমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হবে এবং ফলনও ভালো হবে। কৃষকদের নতুন নতুন জাতের সবজি চাষে আমরা উদ্বুদ্ধ করছি।’

Leave a Reply