আইএমএফ’র শর্তের খক্ষ মধ্যবিত্ত ও গরিবের ঘাড়ে

আইএমএফ’র শর্তের খক্ষ মধ্যবিত্ত ও গরিবের ঘাড়ে

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এখন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যসহ সামগ্রিকভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বেড়ে যাবে। প্রকারান্তরে যার খেসারত দিতে হবে মূলত সাধারণ জনগণকে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের গরিব মানুষের কষ্টের শেষ থাকবে না। এমনটিই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশকে ৪৫০ কোটি ডলারে ঋণ দেওয়ার বিপরীতে আইএমএফ এবার তাদের অ্যাকশান প্ল্যান শক্তভাবে বাস্তবায়ন করতে চায়। এজন্য সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে হালনাগাদ সঠিক তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করছে। একইসঙ্গে সরকারের রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছ থেকে বিশ্বাসযোগ্য প্রতিশ্রুতি নিচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইএমএফ’র অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়ন করতে গেলে প্রথমত জনস্বার্থের বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি বহুলাংশে কমে যাবে। এরফলে বাজারে দ্রুত প্রভাব বিস্তারের মূল চাবিকাঠি হিসাবে পরিচিত গ্যাস ও বিদ্যুতের দামে আর লাগাম টানা সম্ভব হবে না। আর এখানে মুক্তবাজার অর্থনীতির নিয়মে দাম বাড়তে থাকলে জনজীবনের সবক্ষেত্রে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। তেল, বিদ্যুৎ ও সারের দাম আরও বাড়বে। জনগণকে যে কোনো পণ্য ও সেবা কিনতে গেলে ক্রমেই বেশি দাম দিতে হবে। ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। এতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতে পারবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাজারে ডলারের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যেই এর দাম নির্ধারিত হবে। এটি হলে ডলারের দাম আরও বাড়বে। কারণ বাজারের চাহিদা অনুযায়ী ডলারের জোগান নেই।

পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘প্রতি মাসে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোসহ যদি গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দাম আরও বাড়ানো হলে বিভিন্ন খাতে এর প্রভাব পড়বে। কিন্তু কোন খাতে কী পরিমাণ প্রভাব পড়বে সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই সরকারের। এটি দ্রুত করা উচিত।’ তিনি বলেন, ‘এটি সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দাম বাড়ানো উচিত। তাহলে দাম বাড়ার প্রভাবটা সব খাতেই যৌক্তিকভাবে পড়বে। কিন্তু এখন দাম বাড়ানোর ফলে ব্যবসায়ী বা পরিবহণ মালিকরা ইচ্ছেমতো করে পণ্যে বা সেবার দাম বাড়াচ্ছে। এতে বাজারে বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভোক্তা সাধারণ। ভোক্তারা সংগঠিত নয় বলে তারা ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ করতেও পারছে না।’ তিনি মনে করেন, ‘এ ধরনের বিশৃঙ্খলাও মূল্যস্ফীতির হার বাড়াতে ভূমিকা রাখছে।’

এদিকে বুধবার সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ব্যবসায়ীদের আর ভর্তুকি দিয়ে গ্যাস সরবরাহ করবে না সরকার। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে যে দামে গ্যাস কেনা হবে, সেই দামেই ব্যবসায়ীদের গ্যাস কিনতে হবে। তিনি এও বলেছেন, আইএমএফ থেকে তেমন কোনো শর্ত মেনে ঋণ নেওয়া হয়নি।

সূত্র জানায়, আইএমএফ ঋণের ব্যাপারে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা ইতোমধ্যেই চূড়ান্ত হয়েছে। এতে শর্তের বিষয়গুলো চিহ্নিত করে করণীয় নির্ধারণ করা হচ্ছে। এছাড়া অ্যাকশন প্ল্যানগুলো সমন্বয় করে একটি চুক্তিপত্র চূড়ান্ত করা হবে। অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়নে সরকার ইতোমধ্যে ২২ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে একজন করে প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। তারা শর্ত বাস্তবায়নের বিষয়গুলো তদারকি করবেন।

Leave a Reply