লোকসান, ভর্তুকি আর দাম বৃদ্ধির চক্রে বিদ্যুৎ খাত

লোকসান, ভর্তুকি আর দাম বৃদ্ধির চক্রে বিদ্যুৎ খাত

দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা এক যুগে বেড়ে পাঁচগুণ হয়েছে। উৎপাদন সক্ষমতাও পাঁচগুণ ছাড়িয়ে গেছে। তবে এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিদ্যুৎ ?উৎপাদন ব্যয় কয়েকগুণ হয়েছে। এর মধ্যে ডিজেলচালিত বেশকিছু কেন্দ্রে (বিশেষত রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র) উৎপাদন ব্যয় অস্বাভাবিক পর্যায়ে ঠেকেছে। এতে প্রতি বছর বড় অংকের লোকসান গুনতে হয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি)। সে ঘাটতি পূরণে একদিকে সরকার ভর্তুকি হিসেবে ঢেলেছে মোটা অংকের অর্থ, অন্যদিকে দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। এই হলো দেশের বিদ্যুৎ খাতের চিত্র।

পিডিবির গত এক যুগের হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১২ বছরে (২০১০-১১ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর) রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থাটি লোকসান গুনেছে এক লাখ ছয় হাজার ১৭৬ কোটি টাকার বেশি। তবে লোকসানের এ চিত্র সবসময় সমান ছিল না। আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের শুরুর দিকে এ লোকসান অনেক কম ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তা অনেক বেড়ে গেছে। এর মধ্যে গত অর্থবছর রেকর্ড লোকসান গুনেছে পিডিবি।

১২ বছরের মধ্যে ২০১০-১১ অর্থবছর সংস্থাটির লোকসান ছিল চার হাজার ৬২০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ছয় হাজার ৬৯৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। তবে ২০১২-১৩ অর্থবছর তা কিছুটা কমে দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ৪৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। পরের কয়েক বছরও পিডিবির লোকসান চার থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকার মধ্যেই ছিল। এর মধ্যে ২০১৩-১৪ অর্থবছর সংস্থাটি লোকসান গুনে ছয় হাজার ৮০৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছর সাত হাজার ২৮২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছর লোকসান কমে দাঁড়ায় তিন হাজার ৮৭৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছর আবার কিছুটা বেড়ে হয় চার হাজার ৪৩৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

যদিও ২০১৭-১৮ অর্থবছর লোকসান এক লাফে দ্বিগুণ ছাড়িয়ে যায়। ওই অর্থবছর পিডিবির লোকসান দাঁড়ায় ৯ হাজার ৩১০ কোটি ১৫ লাখ টাকা। পরের দুই অর্থবছর লোকসান কিছুটা কমে সংস্থাটির। এর মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছর আট হাজার ১৪১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ও ২০১৯-২০ অর্থবছর সাত হাজার ৪৪৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা লোকসান গুনে পিডিবি। তবে পরের দুই অর্থবছর তা ক্রমেই বেড়ে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছর সংস্থাটির লোকসানের পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৫০৯ কোটি ১২ লাখ টাকা। আর গত (২০২১-২২) অর্থবছর পিডিবির লোকসান দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার আট কোটি ৩২ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছর পিডিবি লোকসান গুনেছে ২০১০-১১ থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের (৫ বছর) সম্মিলিত লোকসানের চেয়ে বেশি।

ভর্তুকির অবস্থা: লোকসানের ঘাটতি পূরণে গত ১২ বছরে (২০১০-১১ অর্থবছর থেকে ২০২০-২২ অর্থবছর) ১ লাখ ১৪২ কোটি ৮১ লাখ টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়েছে পিডিবিকে। যদিও এর মধ্যে ঋণ হিসেবে দেয়া হয় ৪৩ হাজার ১৬০ কোটি ১২ লাখ টাকা। বাজেট সহায়তা হিসেবে ৩ শতাংশ সুদে এ ঋণ দেয়া হয় পিডিবিকে। তবে লোকসানি পিডিবি সে ঋণ বা সুদ কোনোটাই ফেরত দিতে পারেনি। ওই ঋণকে ভর্তুকিতে রূপান্তরের জন্য কয়েক দফা অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠিও দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সুদ মওকুফ চাওয়া হয়। যদিও তা এখনও বাস্তবায়ন করেনি অর্থ মন্ত্রণালয়। আর ভর্তুকির বাকি ৫৬ হাজার ৯৮২ কোটি ৮১ লাখ টাকা সরাসরি অনুদান হিসেবে প্রদান করে অর্থ মন্ত্রণালয়।

ভর্তুকির হিসাব বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১০-১১ অর্থবছর পিডিবিকে ভর্তুকি দেয়া হয় চার হাজার কোটি টাকা। পরের অর্থবছর (২০১১-১২) তা বেড়ে দাঁড়ায় ছয় হাজার ৩৫৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছর ভর্তুকি দেয়া হয় চার হাজার ৪৮৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থবছর ছয় হাজার ১০০ কোটি, ২০১৪-১৫ অর্থছর আট হাজার ৯৭৮ কোটি ৯ লাখ, ২০১৫-১৬ অর্থবছর চার হাজার ৩৬৫ কোটি ২৪ লাখ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছর তিন হাজার ৯৯৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ওই অর্থবছর পর্যন্ত ভর্তুকির অর্থ ঋণ হিসেবে দেয়া হতো।

২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে অনুদান হিসেবে পিডিবিকে ভর্তুকি দেয়া শুরু হয়। ওই অর্থবছর ভর্তুকি দেয়া হয়েছিল পাঁচ হাজার ৪৮৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা। পরের (২০১৮-১৯) অর্থবছর ভর্তুকি দেয়া হয় সাত হাজার ৫০০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সাত হাজার ৪৩৯ কোটি ৪৪ লাখ এবং ২০২০-২১ অর্থবছর দেয়া হয় ১১ হাজার ৭৭৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা। গত অর্থবছর পিডিবিকে ভর্তুকি দেয়া হয় ২৯ হাজার ৬৫৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। তবে পুরো অর্থ এখনও ছাড় হয়নি। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ছাড় করা হয়েছে সাত হাজার ৪০০ কোটি চার লাখ টাকা। আর বকেয়া রয়েছে ১৬ হাজার ৮৫৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির চিত্র: বিদ্যুৎ খাতে লোকসানের মূল কারণ, অপরিকল্পিতভাবে উচ্চ ব্যয়ের রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেয়া। পাশাপাশি বসিয়ে রেখে এসব কেন্দ্রের জন্য উচ্চ হারে ক্যাপাসিটি চার্জর প্রদান। এতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ব্যয় নিয়মিতই বেড়েছে। ১২ বছরে এ ব্যয় প্রায় দুই দশমিক ২৪ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে।

ব্যয় বৃদ্ধির চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১০-১১ অর্থবছর প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ছিল গড়ে তিন টাকা ৯৫ পয়সা। ২০১১-১২ অর্থবছর তা এক লাফে বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ টাকা ৩৬ পয়সা। অর্থাৎ ওই অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদনের গড় ব্যয় বেড়েছিল ৬০ শতাংশ। ২০১২-১৩ অর্থবছর এ ব্যয় আরও বেড়ে হয় পাঁচ টাকা ৭৭ পয়সা ও ২০১৩-১৪ অর্থবছর ছয় টাকা ২৮ পয়সা। পরের অর্থবছর তা সামান্য কমে দাঁড়ায় ছয় টাকা ২৭ পয়সা। পরের বছরগুলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদনের গড় ব্যয় ওঠানামা করেছে।

২০১৫-১৬ অর্থবছর এ ব্যয় কমে দাঁড়ায় পাঁচ টাকা ৫৫ পয়সা। ২০১৬-১৭ অর্থবছর তা আবার বেড়ে হয় পাঁচ টাকা ৬৯ পয়সা ও ২০১৭-১৮ অর্থবছর ছয় টাকা এক পয়সা। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ার প্রভাবে পরের দুই বছর তা আবার কমে আসে। এর মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছর ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়ে গড়ে ছয় টাকা এক পয়সা ও ২০১৯-২০ অর্থবছর পাঁচ টাকা ৯১ পয়সা।

এরপর বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় আবার বাড়তে শুরু করে। ২০২০-২১ অর্থবছর তা বেড়ে হয় ৬ টাকা ৬১ পয়সা ও ২০২১-২২ অর্থবছর ৮ টাকা ৮৪ পয়সা। মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে ফার্নেস অয়েলের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরবরাহকৃত গ্যাসের পরিমাণ কমিয়ে দেয়ায় গত অর্থবছর এ ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে।

দাম বৃদ্ধির চক্র: বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির এ ধাক্কা ভর্তুকি দিয়ে পুরোটা মেটানো যায়নি। এজন্য বাল্ক (পাইকারি) পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় ১২ বছরে ৯ বার। আবার বাল্ক মূল্যহার বাড়ানোয় লোকসানে পড়ে বিদ্যুৎ বিতরণকারী কোম্পানিগুলো। এতে গ্রাহক পর্যায়েও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে ১২ বছরে ৯ বার। এভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির চাপ শেষ পর্যন্ত জনগণের ঘাড়ে এসেছে পড়েছে।

বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১০-১১ অর্থবছরের শুরুতে বাল্ক বিদ্যুতের দাম ছিল দুই টাকা ৩৭ পয়সা। বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে ছয় টাকা ২০ পয়সা। অর্থাৎ ১২ বছরে পাইকারি বিদ্যুতের দাম বেড়ে হয়েছে প্রায় দুই দশমিক ৬২ গুণ। আর ২০১০-১১ অর্থবছরের শুরুতে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ছিল তিন টাকা ৯২ পয়সা। বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে সাত টাকা ৪৯ পয়সা। অর্থাৎ ১২ বছরে পাইকারি বিদ্যুতের দাম বেড়ে হয়েছে প্রায় এক দশমিক ৯১ গুণ। যদিও ২০১০ সালের মার্চে একবার গ্রাহক পর্যায়ে প্রথম বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। তবে এখানে আলোচনা ও তুলনার সুবিধার্থে ১২ বছরের তুলনা তুলে আনা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়তে থাকলে ২০১১ সালে তিনবার বাল্ক মূল্যহার বাড়ানো হয়। ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে প্রথম বাল্ক মূল্যহার ১১ শতাংশ বাড়ানো হয়। এতে মূল্যহার দাঁড়ায় দুই টাকা ৬৩ পয়সা। আগস্টে বাড়ানো হয় ছয় দশমিক ৬৬ শতাংশ দাম। এতে দাম বেড়ে হয় দুই টাকা ৮০ পয়সা। আর ডিসেম্বরে ১৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ বাড়িয়ে করা হয় তিন টাকা ২৭ পয়সা।

২০১২ সালেও তিনবার বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানো হয়। ওই বছরে ফেব্রুয়ারিতে বাল্ক মূল্যহার ১৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ বাড়ানো হয়। এতে মূল্যহার দাঁড়ায় তিন টাকা ৭৪ পয়সা। মার্চেই আবার সাত দশমিক ৪৯ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। এতে বাল্ক দাম বেড়ে হয় চার টাকা দুই পয়সা। আর আগস্টে ১৬ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়িয়ে করা হয় চার টাকা ৭০ পয়সা। তবে পরে পল্লিবিদ্যুৎ সমিতিগুলোতে বেশি বিক্রি করায় বাল্ক মূল্যহার কিছুটা কমে দাঁড়ায় চার টাকা ৬৭ পয়সা। এরপর কয়েক বছর বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়নি।

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে বাল্ক মূল্যহার চার দশমিক ৯৩ শতাংশ বাড়িয়ে করা হয় চার টাকা ৯০ পয়সা। তবে এবারও পল্লিবিদ্যুৎ সমিতিগুলোয় বেশি বিদ্যুৎ বিক্রি করায় বাল্ক মূল্যহার আবারও কিছুটা কমে দাঁড়ায় চার টাকা ৮৭ পয়সা। তবে ২০১৭ সালে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় পিডিবি প্রস্তাব করলেও তা বাতিল করে দেয় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। তবে শুনানি শেষে মূল্যহার না বাড়িয়ে উল্টো কমিয়ে দেয় বিইআরসি। সে সময় এ হার নির্ধারণ করে দেয় চার টাকা ৮৪ পয়সা।

এরপর আবারও তিন বছর বাল্ক মূল্যহার বাড়ানো হয়নি। তবে এ সময় পল্লিবিদ্যুৎ সমিতিগুলোয় বেশি বিদ্যুৎ বিক্রি করায় আগের মতোই বাল্ক মূল্যহার কিছুটা কমে দাঁড়ায় চার টাকা ৭৭ পয়সা। ২০২০ সালের মার্চে বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার আট দশমিক ৪০ শতাংশ বাড়ানো হয়। এতে বাল্ক দাম বেড়ে হয় পাঁচ টাকা ১৭ পয়সা। আর সর্বশেষ গত বছর ডিসেম্বরে ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাল্ক মূল্যহার বাড়ানো হয়। এতে বাল্ক দাম বেড়ে হয় ছয় টাকা ২০ পয়সা। এতে ১২ বছরে পাইকারি বিদ্যুতের দাম বেড়ে হয়েছে প্রায় দুই দশমিক ৬২ গুণ।

এবার দেখা যাক গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির বিশ্লেষণ। ২০১০ সালের মার্চে গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের গড় মূল্য বাড়িয়ে তিন টাকা ৯২ পয়সা করা হয়। পরের বছর (২০১১ সাল) গ্রাহক পর্যায়ে দুই দফা বাড়ানো হয় বিদ্যুতের দাম। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে বাড়ানো হয় পাঁচ শতাংশ ও ডিসেম্বরে ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। এতে বিদ্যুতের গড় দাম বেড়ে দাঁড়ায় চার টাকা ৬৭ পয়সা। ২০১২ সালেও খুচরা বিদ্যুতের দাম দুই দফা বাড়ানো হয়। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে বাড়ে সাত দশমিক শূন্য নয় শতাংশ ও সেপ্টেম্বরে বাড়ে ১৫ শতাংশ। এতে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে বিদ্যুতের গড় মূল্য বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ টাকা ৭৫ পয়সা।

এরপর ২০১৪ সালের মার্চে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ছয় দশমিক ৯৬ শতাংশ বাড়িয়ে করা হয় ছয় টাকা ১৫ পয়সা। আর ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে তা দুই দশমিক ৯৩ শতাংশ বেড়ে হয় ছয় টাকা ৩৩ পয়সা। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম আবারও পাঁচ দশমিক ৩০ শতাংশ বাড়ানো হয়। সে সময় বিদ্যুতের গড় মূল্যহার ছয় টাকা ৮৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে ওইবারই প্রথম বিদ্যুৎ বিতরণকারী সবগুলো কোম্পানির জন্য অভিন্ন মূল্যহার নির্ধারণ করা হয়। এতে ঢাকার চেয়ে বেশি গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতের দাম বেশি হারে বাড়ে। এর প্রভাবে মূল্যহার কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে দাঁড়িয়েছে গড়ে ছয় টাকা ৭৭ পয়সা।

সংশোধিত মূল্যহারের ভিত্তিতে ২০২০ সালের মার্চে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের গড় মূল্যহার পাঁচ দশমিক ৩০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এতে গড় মূল্যহার দাঁড়িয়েছে সাত টাকা ১৩ পয়সা। আর সর্বশেষ বিদ্যুতের গড় মূল্যহার চলতি মাসে পাঁচ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এতে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যহার বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাত টাকা ৪৯ পয়সা। তবে এবার গণশুনানি উপেক্ষা করে এ ঘোষণা দেয়া হলো। ২০০৭ সালের পর এবারই সরাসরি নির্বাহী আদেশে দাম বাড়াল বিদ্যুৎ বিভাগ।

যদিও মূল্য বৃদ্ধির এ চক্র এখানেই শেষ হচ্ছে না। আগামী মাস থেকেই আবারও বাল্ক ও গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে বলে শোনা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বাল্কে ১০ শতাংশ ও গ্রাহক পর্যায়ে পাঁচ শতাংশ মূল্যহার বাড়ানো হবে। এখন থেকে নিয়মিতই বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হবে বলেই শোনা যাচ্ছে। আর বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি তুলে দেয়া হবে বলে এরই মধ্যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এটি করা হলে বিদ্যুতের দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা কেউই বলতে পারছে না।

প্রধান প্রতিবেদক

Leave a Reply